আবারও ঢুকছে রোহিঙ্গারা / সন্তানসহ বাংলাদেশে পালিয়ে আসা তিন রোহিঙ্গা /
২৪খবরবিডি: 'গত কয়েকদিন ধরেই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ওপারে আরাকান জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সংঘাত চলছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। তাদের ছোড়া কয়েকটি গোলাও সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের সীমানায় এসে পড়েছে।'
'আর দিনরাত স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের শব্দও ভেসে আসছে। এতে আতঙ্ক বিরাজ করছে সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের মনে। এদিকে, দেশটিতে অত্যাচারিত হয়ে ফের বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করেছে রোহিঙ্গারা। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে এসে আশ্রয় নেওয়া একাধিক পরিবারের সন্ধান মিলেছে। মিয়ানমারে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছে এই পরিবারগুলো। তাদের দাবি, এবার মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর পাশাপাশি আরাকান জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র বাহিনীও (এএ) সেখানকার মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর চড়াও হয়েছে। বিভিন্ন জনপদে ছড়িয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের মংডুর ক্যাম্পে নেওয়ার জন্য গত মাস থেকেই পাশবিক নির্যাতন শুরু করেছে তারা। দুই বাহিনীর সশস্ত্র নির্যাতনে চোখের সামনে স্বামী হারানো এক নারীসহ একাধিক রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলা ট্রিবিউনের টেকনাফ প্রতিনিধি। নতুন করে আসা এই রোহিঙ্গাদের ভাষ্য, শাহপরীর দ্বীপ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টায় বর্তমানে নাফ নদীর ওপারে ধংখালীর চরে ৮০০-এর বেশি রোহিঙ্গা লুকিয়ে আছে। যারা সুযোগ বুঝে এপারে ঢুকে পড়তে পারে।'
'সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করে কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় নেয় সাত জনের একটি রোহিঙ্গা দল। তারা সবাই রাখাইনের বুথেডং গ্রামের বাসিন্দা। ওই দলের দিলদার বেগম দাবি করেন, 'মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকানের সশস্ত্র বাহিনী নতুন করে আমাদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে। তারা আমাদের এখান থেকে মংডু (ক্যাম্প) চলে যাওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে আসছিল। এর প্রতিবাদ করায় আমার স্বামী শহীদুল্লাহকে মেরে ফেলেছে। আমার মতো অনেকের ঘরবাড়িতে এভাবে হামলা চালাচ্ছে। ফলে প্রাণভয়ে তিন মাসের সন্তান নিয়ে ১১ দিনের চেষ্টায় টেকনাফে পৌঁছেছি। পরে সেখান থেকে কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছি।'
'একই ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া আবুল ওয়াফা বলেন, 'ওখানে নতুন করে নির্যাতন শুরু করেছে। সেজন্য আমরা পালিয়ে এসেছি। তারা লড়াইয়ের কথা বলে আমাদের গ্রাম থেকে তাড়াচ্ছে। যার ফলে সীমান্তের ধংখালীর চরে ৮০০-এর বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। তারাও এপারে আসার চেষ্টা করছে। বার্মা সরকারের একটি পরিকল্পনা শুনেছি, মংডু টাউনশিপে ক্যাম্প করে সব রোহিঙ্গাদের সেখানে রাখতে চায়।' সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রাখাইনে মাসখানেক ধরে নতুন করে সংঘর্ষ চলছে। এ সংঘর্ষের প্রভাব পড়ছে সীমান্ত এলাকায়। এ কারণে মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে আবারও বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন রোহিঙ্গারা। এরই অংশ হিসেবে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে। জানতে চাইলে শরণার্থী শিবির এলাকায় নিয়োজিত ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক আমির জাফর বলেন, 'নতুন আসা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন তারা।'
'নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসান কর্মকর্তা বলেন, ‘দুই-একটি নতুন পরিবার মিয়ানমার থেকে এসে ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। নতুন করে কোনও রোহিঙ্গা আশ্রয় দেওয়া হবে না।' বিজিবির ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত
আবারও ঢুকছে রোহিঙ্গারা
অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ৪৭৮ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠিয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। এছাড়া চার রোহিঙ্গাকে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। এর মধ্য নারী ১৩১ জন, শিশু ৮১ ও ২৬৬ জন পুরুষ। এই বিষয়ে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার বলেন, 'রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধসহ সীমান্তে সুরক্ষিত রাখতে বিজিবির তৎপর রয়েছে।'
'জানতে চাইলে বাংলাদেশি মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, 'মিয়ানমারে যেখানে রোহিঙ্গা থাকে, তাদের জন্য বাংলাদেশ কাছে। যদি সেখানে ঝামেলা হয় প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু নতুন করে রোহিঙ্গা আশ্রয় দেওয়া আমাদের জন্য কঠিন। তবে সবার ওপরে মানবিকতা।' প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইন অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন শুরু করেছিলেন। সে সময় বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য রোহিঙ্গাদের ঢল নেমেছিল। তখন সীমান্ত অতিক্রম করে প্রায় সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছিলেন। আগে আসা রোহিঙ্গাসহ প্রায় ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার ঠাঁই হয় উখিয়া-টেকনাফে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে কয়েকদফা চেষ্টা চালিয়েও এখন একজনকেও পাঠানো সম্ভব হয়নি।'